Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাছ চাষ সমস্যা ও সমাধান

কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত এদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে মৎস্য সেক্টরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশের জলাশয়ে ২৬০ প্রজাতির দেশীয় মাছ, ১২ প্রজাতির বিদেশি মাছ এবং ২৪ প্রজাতির চিংড়ি রয়েছে। এ ২৬০ প্রজাতির মধ্যে ৫৬ প্রজাতির মাছ আজ একেবারে হারিয়ে যেতে বসেছে। যেমন- সরপুঁটি, রানী, মহাশোল, মেনী, নান্দিনা, রিটা, বাঘাইর, বাচা, কালবাউশ, গনিয়া, চিতল, মধুপাবদা, শিং, নাপতেকই, লাল চান্দা, নামা চান্দা, তেলিটাকি, বাটা এসব। মাছ যে হারিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। আমরা তো দেখছি, অনেক মাছ আমাদের খাল বিল নদী নালায় আর নেই। মাছের বংশ বৃদ্ধি, বিস্তার ও উৎপাদনের জন্য কয়েকটি দিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-

 

  • কিছু প্রজাতির প্রজননের জন্য বিশেষ ধরনের জায়গার প্রয়োজন;
  • কিছু প্রজাতির প্রজনন বিচরণের জন্য বিশেষ পরিবেশ প্রয়োজন;
  • কিছু প্রজাতির প্রজননের পর বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন।

এক সময় এ দিকগুলো ছিল প্রকৃতির দান। কিন্তু বর্তমানে কোনো নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে। প্রশ্ন আসতে পারে উল্লিখিত বিষয়গুলো কি শুধু প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না অন্য প্রজাতির জন্য? বিলুপ্ত প্রায় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, লালন ক্ষেত্র, বিচরণ ক্ষেত্র এসবের দিকে তাকালে বোঝা যায় উল্লিখিত নির্দেশগুলো মানা হয় না। এ কারণের পেছনে রয়েছে মানুষ। প্রকৃতির কারণে পরিবেশ যতটা বদলাচ্ছে মানুষের কারণে বদলাচ্ছে তার চেয়ে বেশি। মৎস্য প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ফলে যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো-

 

  • মৎস্য সম্পদের জীববৈচিত্র্য নষ্টসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট;
  • বিলুপ্ত প্রজাতির মধ্যে অধিকাংশ মাছ গ্রামের সাধারণ মানুষের পুষ্টির উৎস। যেমন- সরপুঁটি, পাবদা, ভেদা, বাটা, নামা, চান্দা, গনিয়া, শোল, টাকি, বাঘা, ফলি, বাচা, একঠোঁটা ইত্যাদি। মাছগুলোখাল-বিল-হাওর-বাঁওড়-নদী-নালা ইত্যাদিতে আগের মতো না পাওয়ায় দরিদ্র জনসাধারণ আমিষের চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে;
  • জেলে সম্প্রদায়সহ দরিদ্র মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস ছিল এসব বড় প্রজাতির মাছ, যা হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে বলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জেলেদের কর্মসংস্থান। প্রভাব পড়ছে জাতীয় আয়সহ রপ্তানি আয়ে।

এবার আরও দেখা যাক মৎস্য সম্পদ কিভাবে উজাড় হচ্ছে- জলাশয় ভরাট হয়ে যায়, কারেন্ট জালের ব্যবহার, প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ধরা, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, পানি সেচ দিয়ে সব মাছ তুলে ফেলা, পাটি বাঁধ দিয়ে বিলের সব মাছ ধরা, কলকারখানার বর্জ্য জলাশয়ে ফেলা, জলাশয়ে বিষ প্রয়োগ, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, সচেতনতার অভাব ইত্যাদি।
উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু কারণ যার সংশোধন বর্তমানে হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু কিছু কারণ আছে যা এখনও রোধ করতে পারি যদি আমরা একটু সচেতন হই। যেমন-
কারেন্ট জালের ব্যবহার : শুধু কারেন্ট জাল নয় নির্ধারিত ফাঁসের জাল যদি ছাড়া যায় তাহলে মাছের বিলুপ্তি রোধ করা অনেকটা সম্ভব এবং সে সাথে মাছের উৎপাদনও অনেকটা বেড়ে যাবে। বছরে যে পরিমাণ জাটকা ধরা পড়ে তার মাত্র শতকরা ২৫ ভাগ যদি রক্ষা করা যায় তাহলে বছরে ১.৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন সম্ভব, যার বাজারমূল্য ৬০০ কোটি টাকা। শুধু ইলিশ নয় বর্ষা মৌসুমে এ সব জালের অবাধ ব্যবহারে ডিমওয়ালা মাছসহ ধরা পড়ছে অনেক জলজ জীব ও কীটপতঙ্গ ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।
প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ না ধরা : বছরে বর্ষা মৌসুমে মাছ আমরা অনেকটা হাতের নাগালের মধ্যে পেয়ে থাকি। এ মৌসুমে মাছের ডিম ছাড়ার সময়। এ সময় যদি আমরা মাছ না ধরি তাহলে মাছের উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে।
পাটি বাঁধ এবং সেচ দিয়ে জলাশয় শুকিয়ে ফেলা পাটি বাঁধ এবং সেচ দিয়ে জলাশয় শুকিয়ে সব মাছ ধরে  ফেলায় পরের বছরের মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে। এমনকি অনেক প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে কোনো ‘মা’ মাছ না থাকায়।
রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও কলকারখানার বর্জ্য ‘নিরাপদ পানি চাই’ স্লোগান বর্তমানে সবার দাবি। মাছের অস্তিত্ব, সংখ্যা, বিকাশ ও সংরক্ষণে নিরাপদ পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পানি ছাড়া মাছ কল্পনা করা যায় না বলে পানি সর্বোতভাবে মাছের উপযোগী হতে হবে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও কলকারখানার বর্জ্যরে কারণে পানির উপকারিতা এবং গুণাবলি আজ বিনষ্ট। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও বর্জ্যরে প্রভাবে অপেক্ষাকৃত নাজুক প্রকৃতির মাছের প্রজনন, বিচরণ এবং মাছের খাদ্য প্লাংটন উৎপাদনসহ বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কই, শিং, মাগুর, পুঁটি, শোল, টাকি, গজার, বেলে, টেংরা এসব মাছ সাধারণত কম পানিতে ধানের জমিতে ডিম দেয় এবং বাচ্চা লালন করে। কাতলা, রুই, মৃগেল, কালাবাউশসহ অন্যান্য মাছের ছোট পোনা নিচু জমির ধানক্ষেতকে লালনভূমি হিসেবে ব্যবহার করে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও কলকারখানার বর্জ্যরে কারণে মাছের পাশাপাশি জলজ অন্যান্য প্রাণীর প্রজনন, বিচরণ এবং লালন ক্ষেত্র দূষিত হচ্ছে।
অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ : প্রকৃতি মাছের পরিবেশ স্থির করে দিয়েছে। মানুষ তা পাল্টে দিচ্ছে, নষ্ট করছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ, বাঁধ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে মাছের অবাধ বিচরণ যে সীমিত হচ্ছে তা নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি তার বাঁচার মতো খাবার না পেয়ে শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। গেল ক’বছর নাগাদ বাংলাদেশে মোট ৬১৩৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে খাদ্য উৎপাদন কিছুটা বাড়লে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণÑ চাঁদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ সেচ প্রকল্পের ফলে প্রথম দুই বছরে মাছের উৎপাদন কমেছে ৩৫ শতাংশ।
আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ : বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় ছোট প্রজাতির মাছকে অবাঞ্ছিত এবং বোয়াল, টাকি, গজার এসব মাছকে রাক্ষুসে মাছ হিসেবে উল্লেখ করে কীটনাশক প্রয়োগ করে মেরে ফেলার ফলে নদ-নদী, খাল-বিলের পাশাপাশি বদ্ধ জলাশয় ও পুকুর থেকে এসব ব— মাছ দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশি মাছ চাষের প্রবণতাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমরা অবশ্য আমাদের প্রয়োজনে বিদেশি মাছ চাষ করব, তাই বলে দেশি প্রজাতির মাছকে ধ্বংস করে নয়। আমাদের দেশি প্রজাতির ছোট মাছ যে পুকুর বা বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা যায় এবং তা লাভজনক সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। একটি বিদেশি জাতের মাছ নিয়ে আমাদের দেশে যত গবেষণা হয়েছে এবং আমাদের দেশি জাতের মাছ নিয়ে তা করা হয়নি মোটেই। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কিছু দেশি মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন এবং চাষ করে আশানুরূপ ফল পাওয়ার পরে সম্প্রসারণ বা চাষিদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য মাঠ পর্যায়ে সরাসরি চাষিদের সাথে কাজ করেন, তাদের মাধ্যমে এসব বড় প্রযুক্তি হস্তান্তর করে দেশি প্রজাতির মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। পাশাপাশি মাছের প্রজনন ক্ষেত্র বিচরণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সেখানে অভয়াশ্রম তৈরি করা এবং নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্র বিচরণ ক্ষেত্রে মাছের নিরবচ্ছিন্ন নির্বিঘœ চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানো, বর্ষা মৌসুমে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ না ধরা, ক্ষতিকর শিকার সরঞ্জাম ব্যবহার না করা। পৃথিবীর অনেক দেশে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশে প্রজাতি বিশেষে এরূপ পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরি।

 

আফতাব চৌধুরী*
*সাংবাদিক ও কলামিস্ট, উপশহর, সিলেট


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon